গুহায় খুদে ফুটবলারদের দুঃস্বপ্নের আদ্যপান্ত   


আর্ন্তজাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৮, ০৯:১৯ এএম
গুহায় খুদে ফুটবলারদের দুঃস্বপ্নের আদ্যপান্ত   

অবশেষে উদ্ধার হয়েছে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকা পড়া ১২ খুদে ফুটবলার ও কোচ। গুহায় আটকা পড়া খুদে ফুটবলারদের উদ্ধার করায় শেষ হলো ১৭ দিনের উৎকণ্ঠা। সবাইকে সুস্থভাবে ফিরে পাওয়ায় পুরো বিশ্বে নেমে এসেছে স্বস্তি। নতুন জীবন ফিরে পাওয়ায় সবাই তাদের স্বাগত জানাচ্ছে আর উদ্ধারকর্মীদের দিচ্ছে বাহবা। তবে সব খুদে ফুটবলারকে সুস্থভাবে ফিরে পাওয়ার পেছনে একজনের নাম বিশেষভাবেই বলতে হবে, দলটির সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওং।

২৩ জুন থেকে ১০ জুলাই ১৭ দিন। ঘুটঘুটে অন্ধকারে চরম বিপদের মধ্যে লম্বা এই সময়ে খুদে ফুটবলারদের আগলে রেখেছিলেন কোচ জানথাওং।

দিনটি ছিল শনিবার। দলের কেউ একজনের জন্মদিন। সবসময় যারা একসঙ্গে থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুটবল খেলে, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ভাগ করে, তারা কী করে একজনের জন্মদিন পালন করবে না! সুতরাং পরিকল্পনা হলো, নিজেদের মধ্যেই ঘটা করে জন্মদিনটি পালন করার। সে জন্য তারা বেছে নিল, তাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা থ্যাম লুয়াং গুহা।

সেই জন্মদিন পালন করার উদ্দেশ্যে ৭০০ বাথ (২৮ ডলার) দিয়ে স্থানীয় এক দোকান থেকে খাবার, পানি এবং মিষ্টি কিনে নিয়েছিল তারা। নিজেদের ব্যবহৃত বাইসাইকেল গুহা মুখে রেখে সেখানে প্রবেশ করলো জন্মদিনের উৎসব করার জন্য। গুহার প্রবেশমুখেই রাখা হলো সাইকেলগুলো এবং আরও ভেতরে প্রবেশ করলো তারা।

খুদে ফুটবলারদের অধিকাংশই ছিল পার্বত্য অধিবাসী। শান, লাহু এবং লুয়া গোত্রের উপজাতি। অনেকেই আছে আবার ল্যানা থাই উপজাতির (যারা থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল থেকে আগত)। পাহাড়ি কিশোর হওয়ার কারণে চরম ডানপিটে, দুরন্তপনা- সবই ছিল তাদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডও তাদের খুব প্রিয়। এক কথায় দারুণ অ্যাডভেঞ্চারাস।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলে যা হয়! ফুটবল দলের ১২ সদস্য যে সময়টায় জন্মদিন উদযাপনে গুহায় প্রবেশ করেছিল, সেটা হয়ে পড়েছিল দুঃসময়। বড্ড অসময়ে প্রবেশ করলো তারা। সময়টা প্রচুর বৃষ্টিপাতের। বছরের এই সময়টায় থাইল্যান্ডের চিয়াংরাই প্রদেশসহ ওই অঞ্চলটাতে তুমুল বৃষ্টিপাতের।  দলের ১২ খুদে ফুটবলার গুহায় প্রবেশ করার পরপরই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। যা তাদেরকে ভয়ানক এক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল।

বলে রাখা ভালো, ১২ খুদে ফুটবলার ২৫ বছর বয়সী কোচ একাপল কিন্তু শুরুতে তাদের সঙ্গে ছিলেন না। ১২ খুদে ফুটবলার নিজেরাই প্রবেশ করেছিল গুহার ভেতর। বৃষ্টির কারণে তারা গুহার ভেতর থেকে বের হয়ে না আসার কারণে দিনের শেষ দিকে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে বের হয়, কোথায় গেল তারা?

পরিবারের সদস্যরা জানতো, এই খুদে ফুটবল ভালোবাসে এবং তাদেরকে ফুটবল ভালোবাসতে শিখিয়েছেন একাপলই। সুতরাং, তিনিই জানবেন, কোথায় আছেন তারা। একাপলকে গিয়ে ধরলো পরিবারের সদস্যরা। তারা জোর করে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কোচকে ঢুকিয়ে দিল গুহার মধ্যে। নিজের দলের খেলোয়াড়দের তিনি খুব ভালোবাসেন। তাদের খোঁজার জন্য তিনি এগিয়ে গেলেন। একটু যেতেই দেখলেন, কিশোরদের বাইসাইকেল পড়ে আছে ওখানে। রয়েছে জুতাও।

সুতরাং একাপল নিশ্চিত হলেন তার দলের সদস্যরা রয়েছে ভেতরে। এ কারণে তিনি গুহার আরও গভীরে প্রবেশ করলেন। গভীর থেকে গভীরে। চেষ্টা করলেন ১২ কিশোর কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিলো তা খুঁজে বের করার। খুঁজে পেলেই তাদের নিয়ে তিনি বের হয়ে আসবেন- এটাই ছিল ইচ্ছা।

একাপল ভেতরে গিয়ে ফুটবলারদের খুঁজে পেলেও তাদের নিয়ে আর বের হতে পারেননি। তাদের পেছন থেকে ধেয়ে আসছিল পানি। জীবন বাঁচাতে সামনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে, একাপলের বেশ ভালো করেই চেনা ছিল গুহার ভেতর নানা অলি-গলি। যে কারণে, ১২ ফুটবলারকে নিরাপদ করার জন্য অনেক ভেতরে গিয়ে একটি উঁচু জায়গা বেছে নিলেন তিনি। যেখানে পানি উঠতে পারবে না এবং তারা নিরাপদ থাকতে পারবে। হয়তো ভেবেছিল, পানি কমে গেলে তিনি আবার কিশোরদের নিয়ে বের হয়ে আসবেন।

কিন্তু একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে সময় যেতে লাগলো, পানি কমার কোনো লক্ষণ নেই। পুরো গুহা পানিভর্তি। ফুটবলারদের কেউ সাঁতারও জানে না। দুর্গম, অন্ধকার, কবরের মতো নীরব-নিস্তব্ধ ভয়ঙ্কর জায়গাটা থেকে তাই আর বের হওয়া সম্ভব হলো না কারও।

এদিকে খবরটা একজন, দু’জন করে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো থাইল্যান্ডে। থাই মিডিয়া থেকে খবরটা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে গেল সারাবিশ্বে। এদিকে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর সেই দুই ব্রিটিশ ডাইভার ৯ দিন পর খুঁজে পেলেন নিখোঁজ ফুটবল দলকে।

অবশেষে ১৭ দিনের রুদ্ধশ্বাস অভিযানে এক ভয়ংকর যুদ্ধ জয় করে বিপদমুক্ত হলো ১২ খুদে ফুটবলার ও কোচ।

গো নিউজ২৪/এমআর

 

 

 

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর